ব্রাউনির জন্মকথা History of Brownie
ব্রাউনির জন্মকথা
History of Brownie
কেক ও ব্রাউনির প্রধান পার্থক্য হল তৈরির উপাদানে।
কেক তৈরির ক্ষেত্রে মূল উপাদান ময়দা, চিনি অথবা ব্রাউন সুগার, ডিম (ডিমের বদলে টক দই), মাখন অথবা- সাদা তেল, বেকিং সোডা, বেকিং পাউডার এবং কী কেক তৈরি হচ্ছে সেই অনুসারে চকোলেট ও কোকো পাউডার।
কিন্তু ব্রাউনি তৈরির জন্য ময়দা, চিনি অথবা ব্রাউন সুগার, ডিম লাগলেও কোনো বেকিং সোডা ও বেকিং পাউডার লাগে না। এবং সব কেকের ক্ষেত্রে চকোলেট ও কোকো পাউডার ব্যবহার না হলেও যে-কোনো ব্রাউনি তৈরির অন্যতম উপাদান চকোলেট ও কোকো পাউডার।
কেক তৈরিতে বেকিং সোডা ও বেকিং পাউডার ব্যবহারের ফলে কেক হয় হালকা, নরম, উপরিভাগ হয় মসৃণ।
অন্যদিকে বেকিং সোডা ও বেকিং পাউডারের
ব্যবহার না হওয়ায় ব্রাউনি
হয় তুলনামূলক শক্ত এবং উপরিভাগ বহু ফাটলযুক্ত।
তাই বলছিলাম ব্রাউনি কখনওই কেক নয়। ব্রাউনি কেকের মতো নরম নয়, আবার কুকির মতো শক্ত কড়মড়ে নয়। ব্রাউনি হচ্ছে কেক আর কুকির মধ্যবর্তী মন ভোলানো, জিভ-আহ্লাদী এক ডেজার্ট যা যে-কোনো খাদ্যরসিকের প্রতি কামড়ে ছড়িয়ে পড়ে উচ্ছ্বাসের উত্তেজনা।
কেকের থেকে ব্রাউনি কিন্তু বয়সে অনেক নবীন। ইতিহাসের নিরিখে এই তো সেদিন আঁতুর ভাঙল ব্রাউনির। ১৮৯৩-এ, আজ থেকে ১৩০ বছর আগে।
সে সময় শিকাগো শহরে চলছিল ওয়ার্ল্ড কলোম্বিয়ান এক্সপোজিসন (World's Columbian Exposition: 5th May to 31st October 1893)। মেলার আয়োজকদের অন্যতম ছিলেন তৎকালীন মার্কিন ব্যবসায়ী মিসেস বার্থা পামার। (Mrs. Bertha Palmer: 22nd May 1849 to 5th May 1918)। তাঁর স্বামী ছিলেন শিকাগোর পামার হাউস হোটেলের (Palmer House Hotel) কর্ণধার। মিসেস বার্থা স্বামীকে অনুরোধ করেন এক্সপোজিসনে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের জন্য এমন একটি ডেজার্ট বানাতে, যা কেকের থেকে শক্ত হবে, ছোটো চার চৌকো হবে এবং লাঞ্চ বক্সে সহজেই বহন করা যাবে।
স্ত্রীর অনুরোধ শিরোধার্য করে মিস্টার বার্থা হোটেলের প্যাস্ট্রি শেফকে নির্দেশ দেন সেই ধরনের ডেজার্ট বানাতে। মিস্টার বার্থার নির্দেশে প্যাস্ট্রি শেফ জোসেভ স্যাল তৈরি করে ফেলেন ব্রাউনি। দিনটা ছিল ১৮৯৩-এর ৮ মে। জোসেভ তাঁর তৈরি ব্রাউনিতে চকোলেট ছাড়াও ব্যবহার করেছিলেন আখরোট (Walnut) এবং অ্যাপ্রিকটের (Apricot) টুকরো।
যাই হোক, ব্রাউনি তো তৈরি হল, কিন্তু তা জনপ্রিয় হতে সময় লেগে গেল আরও তিন বছর। ফ্যানি ফার্মার (Fannie Farmer: 23rd March 1857 to 16in January 1915) যখন তাঁর বোস্টন কুকিং-স্কুল কুক বুক (Boston Cooking-School Cook Book)-এর ১৮৯৬-এর সংস্করণে পামার হাউস ব্রাউনি সম্পর্কে বিস্তারিত লেখেন, তখন তা মার্কিন মুলুকে জনপ্রিয়তা পায়।
সেই শুরু। তারপর একটার পর একটা কুক-বুক প্রকাশিত হয়েছে, আর স্থান পেয়েছে ব্রাউনির রেসিপি। রেসিপিতে কখনও কোনো উপাদান সংযোজন হয়েছে, কখনও হয়েছে বিয়োজন। তবে ব্রাউনির আধুনিক রূপটি পাচ্ছি, ১৯০৭-এ।
১৯০৭-এ লনি'স কুক বুক (Lowney's Cook Book)-এ মারিয়া উইলেট হাওয়ার্ড (Maria Willet Howard) প্রথম ও বর্তমান ব্রাউনির রেসিপিটি প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন অতিরিক্ত একটি ডিম ও ছোটো-ছোটো চৌকো চকোলেট দিয়ে বর্তমান চকোফাজ ব্রাউনিটি তৈরি করেন মার্কিন মুলুকের ছোট্ট শহর ব্যাঙ্গর (Bangor)-এর কোনো এক গৃহবধূ। মারিয়া এই আধুনিক ব্রাউনির নাম দেন ব্যাঙ্গর ব্রাউনি (Bangor Brownie)।
তাঁর এই দাবিকে মান্যতা দেন তৎকালীন খাদ্য গবেষক এবং ব্যাঙ্গর ডেলি নিউজের সাপ্তাহিক কলমচি মিন্ড্রেড ব্রাউন শ্রামফ (Mildred Brown Schrumpf: 24th January 1903 to 2nd March 2001)।
কিন্তু ইতিহাস বড়োই নিষ্ঠুর। সে কত সাল-তারিখ-ব্যক্তির কথা স্মরণে রাখলেও নামটি পর্যন্ত জানায়নি, কোনো খোঁজ দেয়নি আধুনিক ব্রাউনির স্রষ্টা ব্যাঙ্গর শহরের সেই গৃহবধূর। কারণ তিনি সাধারণ ছিলেন, ঠিক তোমার আমার মতোই। অসাধারণত্বের সাধারণ গৃহবধূ।
পরিশেষে বলি, হোম মেড ব্রাউনির বিবর্তনের ধারা অব্যাহত রেখে তৈরি করেছে বেশ কয়েকটি ব্রাউনি। চকো ফাজ ও ওয়ালনাট ছাড়াও তৈরি করেছে ব্লন্ডি ব্রাউনি, হোয়াইট চকোলেট ব্রাউনি, রেড ভেলভেট ব্রাউনি, ব্লুবেরি ব্রাউনি আর সুরাপ্রেমীদের জন্য আছে রাম অ্যান্ড রেইজিন ব্রাউনি ও রেডওয়াইন ব্রাউনি।
unungharcloudkitchen@gmail.com
উত্তরমুছুন